স্টাফ করেসপন্ডেন্টঃ
নোয়াখালীর (মাঈজদী) পৌর এলাকায় মাহিনুর আক্তার (২০) নামের এক গৃহপরিচারিকাকে নির্যাতন করে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। তবে ওই গৃহপরিচারিকা আত্মহত্যা করেছে বলে দাবি অভিযুক্তদের।
বৃহস্পতিবার (৩০ জুন) রাত ৯ টায় নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করে পুলিশ।
নিহত মাহিনুর আক্তার জেলার বেগমগঞ্জ উপজেলার ছয়ানী ইউনিয়নের তালিবপুর গ্রামের বড় মোল্লা বাড়ির মোঃ নুরুল হকের মেয়ে। সে গত ১ বছর ধরে শহরের উত্তর ফকিরপুর এলাকার শান্তনালয় নামক বাসায় গৃহপরিচারিকার কাজ করে।
নিহতের পরিবারের অভিযোগ, গত এক বছর আগে শান্তনালয় নামের বাসার গৃহকর্তা নাছিম উদ্দিন বাবুর বোন ও বেগমগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শাহনাজ বেগমের মাধ্যমে মাহিনুর আক্তারকে বাবুর বাসায় গৃহপরিচারিকার কাজ দেওয়া হয়। এরপর থেকে পরিবারের সদস্যদের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করতো মাহিনুর। সে কখনো কোন চুরি,খারাপ কাজ এসবের সাথে যুক্ত ছিল না। বৃহস্পতিবার বিকালে বাবু ও তার পরিবারের লোকজন মাহিনুরকে মেরে তা আত্মহত্যা বলে প্রচার করছে।
নিহতের ভাই মামুন হাসান অভিযোগ করে বলেন, বৃহস্পতিবার বিকেলে মাহিনুরের বাসার মালিক নাছিম উদ্দিন বাবু মোবাইলে আমাকে (মামুন) নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে আসতে বলে। হাসপাতলে আসতে বলেই দ্রুত কল কেটে দেয় বাবু। পরে খবর পেয়ে আমরা হাসপাতালে গিয়ে মর্গের ভিতর মাহিনুরের মৃতদেহ দেখতে পাই।হাসপাতালে লোকজনের মাধ্যমে জানতে পারি, মাহিনুরের মৃতদেহ হাসপাতালে রেখে বাসার লোকজন চলে যায়। মাহিনুরের গলায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
মামুনের অভিযোগ, তার বোন মাহিনুরকে হত্যার পর ঘরের একটি কক্ষে ঝুলিয়ে রাখে বাবু ও তার পরিবারের লোকজন। তিনি এই হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন।
হাসপাতালের মর্গের সামনে আর্তনাদ করতে করতে মাহিনুরের মা মায়া বেগম বলেন, আমার মেয়েকে মেরে ফেলা হয়েছে। আমার মেয়ে এ কাজ (আত্মহত্যা) করতে পারে না। আমি এখন কি নিয়ে থাকবো। আমি আমার মেয়ে হত্যার সুষ্ঠু বিচার চাই।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে নাছিম উদ্দিন বাবু বলেন, চলাফেরা নিয়ে মাহিনুরকে আমার স্ত্রী বিভিন্ন সময় সাবধান করত। উল্টাপাল্টা যেন না চলে সেজন্য তাকে নিষেধ করা হয়েছে। এ কারণে আমাদের উপর তার অনেক রাগ ছিল। আমার বাচ্চা তাকে পছন্দ করার কারণে আমরা তাকে রেখে দিয়েছি। বৃহস্পতিবার বিকেলে তার কক্ষ থেকে কোন সাড়াশব্দ না পেয়ে ঘরের বাইরে থেকে ভিতরে ফ্যানের সাথে ওড়না দিয়ে গলায় ফাঁস দেয়া অবস্থায় তাকে দেখতে পাই। পরে প্রতিবেশিদের সহযোগিতায় দ্রুত তাকে নামিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনাটির সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রশাসনকে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য দাবি জানান তিনি।
২৫০ শয্যা বিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের ইমার্জেন্সি মেডিকেল অফিসার ডাঃ আসিফ মোঃ বখতিয়ার ঢাকা মেইলকে বলেন, নিহতের ময়নাতদন্ত শেষে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।
সুধারাম মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ারুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করে ঢাকা মেইলকে জানান, নিহতের মরদেহ হাসপাতাল থেকে উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।