
বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবসের প্রাক্বালে সাইবার আক্রমণের শিকার নোয়াখালীর সিনিয়র সাংবাদিক সাইফুল্যাহ কামরুল ও তার পরিবার: পাঠক হিসেবে আমার ভাবনা…..
সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতাকে বলা হয়ে থাকে রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। রাষ্ট্রের সমান্তরালে সাংবাদিকদের দায়িত্ব পালন করতে হয় অপেক্ষাকৃত কম সুযোগ সুবিধা পেয়ে বেশি ঝুঁকি নিয়ে। যেখানে সুশাসন ও গণতন্ত্র থাকেনা সেখানে ঝুঁকি থাকে আরো বেশি। দুর্নীতি ও দুর্বৃত্তায়নে জড়িত ব্যক্তিদের আঁতে ঘা লাগলে তেঁতে ওঠেন তারা সংবাদপত্র, মিডিয়া তথা সাংবাদিকের উপর। যা “মুক্ত গণমাধ্যম” ধারণার সাথে পুরোপুরি সাংঘর্ষিক।
দাবি করার মোটেই কারণ নেই যে সকল সাংবাদিকই ধোয়া তুলসী পাতা। তাদের অন্যায়ও প্রচলিত আইনের অধীনে বিচার্য। কিন্তু তাই বলে নিরপরাধ সংবাদ মাধ্যম কর্মী কেন ঈর্ষার কারণে জিঘাংসার শিকার হবে?
সম্প্রীতি “রাজনীতি সমাচার” ও Nadira Kesob নামক ফেক ফেসবুক পেইজে একটি তথ্য বিভ্রাটে ভরা উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভিডিও বার্তা দেখলাম! যেখানে অন্যায়ভাবে একজন সিনিয়র সাংবাদিক, তার স্ত্রী এমনকি তার অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেধাবী বাচ্চাদেরও আক্রমণ করতে ছাড়েনি।
০৩ মে আন্তর্জাতিক মুক্ত গণমাধ্যম দিবসের প্রাক্কালে নিউজটি দেখে কৌতূহলী পাঠক ও অনুসন্ধিৎসু প্রাক্তন সংবাদ কর্মী হিসেবে চুপ থাকা মোটেই সমীচীন মনে করছি না। বিশেষত যে সাইফুল্যাহ কামরুল (স্টাফ রিপোর্টার, সময় টিভি) কে অন্যায় আক্রমণ করে তার চরিত্র হনন ও সামাজিকভাবে মান-সম্মান ক্ষুন্ন করা হয়েছে। তিনি আমার তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে সুপরিচিত পরিচ্ছন্ন ক্যারিয়ারের মেধাবী ও পরিশ্রমী সাংবাদিক। পারিবারিকভাবেও পরিচিত হওয়ায় তার বনেদি ও সম্ভ্রান্ত ফ্যামিলি সম্পর্কে আমার জানবার সুযোগ হয়েছে বেশ।
শিক্ষানুরাগী জনাব সাইফুল্যাহ কামরুল তার দুটি কন্যাকে মিলিটারি কলেজিয়েট স্কুল খুলনায় পড়ালেখা করাচ্ছেন কেবল লেখাপড়ার প্রতি আন্তরিক হওয়ায়। পড়ালেখার খরচ চালাতে তিনি কতটা কষ্ট করে যাচ্ছেন তা তিনি তার একটি ফেসবুক স্ট্যাটাসে উল্লেখ করেছেন।শুধু তাই নয় অহিংস এ সাইফুল্যাহ কামরুল নিজের সন্তানদের পাশাপাশি নিজ জেলার ছেলেমেয়েদেরকেও স্বপ্নের ক্যাডেট কলেজে পড়ার সুযোগ করে দেয়ার জন্য সম্প্রতি সুধী সমাবেশ করে তাদের পরামর্শের ভিত্তিতে নোয়াখালী জেলা সদরে রংপুর ক্যাডেট কোচিং এর একটি শাখা মাইজদীতে পরিচালনা করে আসছেন। যে প্রতিষ্ঠানে নোয়াখালী জেলার বিশিষ্টজনদের সন্তানেরা ক্যাডেট কোচিং করে আসছে,যা নোয়াখালী বাসীর শিক্ষার মানোন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা যায়। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এ কল্যাণকর প্রতিষ্ঠানটিকেও আক্রমণের নিশানা করা থেকে তারা মুক্ত থাকেনি।
দীর্ঘদিন একই এলাকায় বসবাস করার সুবাদে প্রায় দেখতাম জনাব সাইফুল্যাহ কামরুল ভাড়ায় চালিত পরিবহনে করে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে যেতেন। কিন্তু তথাকথিত মিডিয়া লিখে দিল যে তার ২০ টি সিএনজি রয়েছে এবং দুটি দামী গাড়ি রয়েছে। ওই সুযোগ সন্ধানী লোকটির তথ্য যে পুরোটাই বিভ্রান্তিকর তা জানা যায় এসব কোনো গাড়ির কাগজপত্র বা অন্য কোনো ডকুমেন্ট তিনি উল্লেখ করতে পারেননি। নম্বর প্লেট মুছে প্রচার করা হয়েছে।
তদুপরি নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে দুইশএকরসহ ঢাকা, খুলনা, নোয়াখালী ও চৌমুহনীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় জনাব সাইফুল্যাহ কামরুলের ভূমি আছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। অথচ এই বায়বীয় তথ্য গুলোর বিপরীতে কোন ডকুমেন্ট ঐ ফেসবুক পেজটি উল্লেখ করতে পারেনি।
ডিজিটাল এই যুগে স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তির দলিল দস্তা বেজ বের করা মোটেই কঠিন কাজ নয়। কথাগুলো যে মিথ্যা ও হাস্যকর তার প্রমাণই হলো ডকুমেন্ট ছাড়া কথা বলা। তাহলে আর মুক্ত ও বস্তুনিষ্ঠ গণমাধ্যম হলো কই? মিথ্যা তথ্য সংবলিত রিপোর্টে জনাব সাইফুল্যাহ কামরুলের ২ কোটি টাকার যে ফ্ল্যাটটির কথা উল্লেখ করা হয়েছে তা ৪৩ লক্ষ টাকা দিয়ে জাতীয় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত অধিদপ্তর থেকে তিনি ২০ বছরের কিস্তিতে নিয়েছেন। একজন সাংবাদিক ৩৫ বছর দেশের প্রথম সারির সংবাদ মাধ্যমে সাংবাদিকতা করে এবং তার স্ত্রী রিয়ান্তা সুলতানা ১৯ বছর নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকুরী করে একটি ফ্ল্যাটের মালিক হওয়া তাও আবার কিস্তিতে খুব খুবই অস্বাভাবিক কিছু?
শিক্ষক পিতার সন্তান জনাব সাইফুল্যাহ কামরুল কোয়ালিটি এডুকেশন নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে ১৯৯৫ সালের ২৪ ডিসেম্বর চৌমুহনী প্রি ক্যাডেট নামে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন তার এক বন্ধুসহ যৌথ উদ্যোগে। আমার পরিবারের সদস্য যেহেতু ওই বিদ্যালয় থেকে পড়ালেখা শেষ করে পরবর্তীতে এমবিবিএস ডাক্তার হয়েছে সেহেতু বিদ্যালয়টি আমি ভালো করেই চিনি জানি। চৌমুহনীতে এ বিদ্যালয়টি তার সুনামের কারনে মানুষ এক নামে চেনে।মজার বিষয় হলো তার স্ত্রীকেও বানিয়ে দেয়া হয়েছে এই স্কুলের মালিক। তার স্ত্রী রিয়ান্তা সুলতানা ডিপার্টমেন্টে আমার এক বছরের সিনিয়র বড় বোন। আমার জানামতে তাদের বিয়ে হয়েছে ২০ ০৪ সালে ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি যোগদান করেন ২০০৬ সালে। তাহলে কী করে উনার স্ত্রী ১৯৯৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া স্কুলের মালিক হন?? আরো হাস্যকর বিষয় হচ্ছে উনার স্ত্রীকে একটি নিষিদ্ধ ছাত্র সংগঠনের ক্যাডার হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। অথচ তিনি কোন রাজনৈতিক দলের সাথে কখনোই সম্পৃক্ত ছিলেন না। এই আপুকে আমরা দেখতাম প্রতিষ্ঠানে এসে ক্লাস করে চলে যেতেন এমনকি কোনো সহশিক্ষা কার্যক্রমেও তেমন অংশগ্রহণ করতে দেখিনি, রাজনীতি তো দূরে থাক। বাংলা বিভাগের বেশিরভাগ মেয়েদের মত তিনি ও পর্দা করেই কলেজে আসতেন ও শালীন চলাফেরা করতেন যা উক্ত বিভাগের সকলেই জানেন। অথচ এ বয়সে এসে তাকে মানহানিকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে স্বামীর সাংবাদিকতা পেশার কারনে। সাংবাদিকতার নামে এই অপসংবাদিকতার বিরুদ্ধে আমি তীব্র প্রতিবাদ নিন্দা ক্ষোভ এবং ঘৃণা জানাচ্ছি। পাশাপাশি মুক্ত গণমাধ্যম চিন্তার উন্মেষ কামনা করছি।
মানুষ মাত্রই ভুল বা অপরাধ করতে পারেন। প্রচলিত আইনে তার বিচারেরও সুযোগ আছে। কিন্তু তা না করে কারো সাফল্যে ঈর্ষান্বিত হয়ে বা তার দায়িত্ব পালনে সমাজ ও রাষ্ট্রের কোটি কোটি টাকা রক্ষা হওয়ায় যে নির্লজ্জভাবে তার চরিত্র হনন করা হলো তা মোটেও মুক্ত গণমাধ্যমের পথচলার জন্য শুভ ইঙ্গিত নয়। এভাবে চলতে থাকলে কেউই আর সৎ ও সাহসিকতার সাথে সংবাদ পরিবেশনের চিন্তা করবে না। পরিবার পরিজন নিয়ে নোংরামি বন্ধ না করা গেলে ভবিষ্যতে আরো অনেকেই এই সাইবার ক্রাইমের শিকার হবে।
তাছাড়া জনাব সাইফুল্যাহ কামরুলের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের রিপোর্টে নেটিজেনরা যে মতামত দিয়েছেন সেখানে শত শত লোক সাংবাদিক কামরুলকে পরিচ্ছন্ন ব্যক্তিত্বের সাহসী কর্তব্যপরায়ণ ন্যায়নিষ্ঠ ও নিরপেক্ষ সাংবাদিক হিসেবেই স্বীকৃতি দিয়েছেন। তদুপরি জনাব সাইফুল্যাহ কামরুল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সব কিছু ক্লিয়ার করেছেন যা একজন মানুষের মধ্য সততা না থাকলে করা বা বলা সম্ভব না।
মুক্ত গণমাধ্যম দিবসে আমার একটাই দাবি নাম গোত্র ও পরিচয়হীন অপসংবাদিকতায় লিপ্ত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সাইট মিডিয়াগুলো চিহ্নিত করে সাংবাদিকতার মতো মহান পেশা ও মাধ্যমকে কলঙ্কমুক্ত করা হোক।
অপসংবাদিকতা নিপাত যাক। অন্যায়ের বিরুদ্ধে সাহসী কলম ও কন্ঠ দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাক। সাংবাদিকতার মতো মহান পেশাকে কলঙ্কিত করতে থাকা ভূঁইফোড় মিডিয়া নামের বেনামি অপপ্রচার যন্ত্রগুলোর দৌরাত্ম বন্ধ হোক।।
লেখক ;
মুহাম্মদ মহিব উল্লাহ, প্রভাষক, বাংলা বিভাগ, সোনাইমুড়ী সরকারি কলেজ।