Dhaka ০৪:০২ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪

অসুস্থদের জন্য রমজানে রোজা

  • আপডেট: ০৬:০৬:১৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১১ মার্চ ২০২৪
  • 46

 

নিজাম উদ্দিন স্বরন:-

ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের জন্য পবিত্র রমজান আশীর্বাদস্বরুপ। বছরে একমাস রোজা রাখা স্বাস্থ্যের জন্য অতন্ত্য ভালো। কিন্তু অনেকেরই এ পবিত্র মাসে স্বাস্থ্য সমস্যা থাকায় রোজা রাখতে চাইলেও রাখতে পারেন না, বা রোজা রাখতে সমস্যা হয়। যারা এমন সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য চিকিৎসাবিজ্ঞান মতে, অধিকাংশ রোগব্যাধি নিয়েই রোজা রাখা যায়। তবে সে ক্ষেত্রে চলতি ওষুধগুলোর ব্যবহারবিধি কিংবা ধরন পরিবর্তন করতে হতে পারে।

চলুন, জেনে নিই কিছু রোগের ক্ষেত্রে যেভাবে রোজা রাখা যাবে:

শ্বাসকষ্ট : রোগ নিয়ন্ত্রণে থাকলে অ্যাজমা বা শ্বাসকষ্টের রোগীদের রোজা রাখতে কোনো বাধা নেই। রোজা রাখা অবস্থায় ইনহেলার নেওয়া যাবে কি না, এ ব্যাপারে সারা বিশ্বের ইসলামী চিন্তাবিদরা যে মতামত দিয়েছেন তাতে রোজা রাখা অবস্থায় ইনহেলার নিলে রোজার ক্ষতি হওয়ার কথা বলা হয়নি। এ ক্ষেত্রে মনে রাখা চাই, কেবল সঠিক নিয়মে ইনহেলার নিলেই রক্তে ওষুধ মিশতে পারে না বা নগণ্য পরিমাণ মেশার সম্ভাবনা থাকে। তবে সেহরি ও ইফতারের সময় ইনহেলার ব্যবহার করাটাই সবচেয়ে নিরাপদ।

উচ্চরক্তচাপ ও হৃদরোগ : যাদের উচ্চরক্তচাপ আছে তারা চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ বন্ধ বা নিজে কোনো সিদ্ধান্ত নেবেন না। মাঝেমধ্যে রক্তচাপ মেপে দেখুন। ওলট-পালট হলে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন। ডাইইউরেটিকস–জাতীয় ওষুধ যারা সেবন করেন, তাদের পানিশূন্যতা হতে পারে বেশি।

পেপটিক আলসার বা অ্যাসিডিটি : পেপটিক আলসারের রোগীদের প্রধান কাজ হলো নিয়মিত খাবার খাওয়া, ঘুমানো এবং ওষুধ গ্রহণ। রোজায় মানুষের জীবন একটা নিয়মে চলে আসে বিধায় এ সময় অ্যাসিডিটির সমস্যা অনেকাংশে কমে যায়। পাশাপাশি অবশ্যই ভাজাপোড়া জাতীয় খাবার পরিহার করতে হবে।

ডায়াবেটিস : যেসব ডায়াবেটিক রোগী বিশেষ খাবার এবং ব্যায়ামের মাধ্যমে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন তাদের জন্য রোজা রাখা খুব সহজ ও উপকারী। যারা মুখে ওষুধ গ্রহণের মাধ্যমে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখছেন তারাও চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী রোজা রাখতে পারবেন, তবে ব্যায়াম করার ব্যাপারে সতর্ক হতে হবে, যাতে ব্যায়ামের ধকল বেশি না হয়। আর ইনসুলিন গ্রহণকারী রোগীরা চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে রোজা রাখবেন। সেহরির সময় রুটি খাওয়া বেশ ভালো। কেননা তা দীর্ঘ সময় পেটে থাকায় রক্তের গ্লুকোজ হঠাৎ করে কমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে না। তবু রমজানে ডায়াবেটিস রোগীর রক্তে সুগারের মাত্রা হঠাৎ কমে গেলে বা হঠাৎ করে অজ্ঞান হয়ে পড়লে তাৎক্ষণিক এক গ্লাস শরবত পান করাতে হবে।

কিডনি : কিডনি রোগে রোজা রাখার ক্ষেত্রে বেশ কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। কিডনি ফেইলিউর রোগীদের সুনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন করতে হয়, নিয়মিত ওষুধ খেতে হয়, এমনকি পানি খাওয়ার ক্ষেত্রেও বিধিনিষেধ প্রয়োগ করা হয়। তাই রোজা রাখার ক্ষেত্রে তাদের বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়। এক বৈজ্ঞানিক সমীক্ষায় দেখা গেছে, অল্প থেকে মধ্যম মাত্রার কিডনি ফেইলিউর রোগীরা রোজা রাখলে কোনো ক্ষতি হয় না। সামান্য যা হয়, রোজার মাস শেষ হয়ে গেলে ১৫ দিনের মধ্যেই তা আগের মতো স্বাভাবিক হয়ে যায়। তবে যাদের কিডনি ফেইলিউরের মাত্রা একেবারে শেষ পর্যায়ে, তাদের পক্ষে রোজা রাখা সম্ভব নয়। তেমনি যারা ডায়ালাইসিসের রোগী অথবা ইতোমধ্যে কিডনি প্রতিস্থাপন করেছেন, ঘড়ির কাঁটা দেখে ওষুধ খেতে হয় বলে তাদের পক্ষেও রোজা রাখা প্রায় অসম্ভব। তবে শারীরিক অবস্থা যা-ই থাকুক না কেন, সর্বাবস্থায় আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে রোজা রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়াই শ্রেয়।

Tag :

সড়ক দুর্ঘটনায় একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে দিশেহারা পরিবার

অসুস্থদের জন্য রমজানে রোজা

আপডেট: ০৬:০৬:১৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১১ মার্চ ২০২৪

 

নিজাম উদ্দিন স্বরন:-

ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের জন্য পবিত্র রমজান আশীর্বাদস্বরুপ। বছরে একমাস রোজা রাখা স্বাস্থ্যের জন্য অতন্ত্য ভালো। কিন্তু অনেকেরই এ পবিত্র মাসে স্বাস্থ্য সমস্যা থাকায় রোজা রাখতে চাইলেও রাখতে পারেন না, বা রোজা রাখতে সমস্যা হয়। যারা এমন সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য চিকিৎসাবিজ্ঞান মতে, অধিকাংশ রোগব্যাধি নিয়েই রোজা রাখা যায়। তবে সে ক্ষেত্রে চলতি ওষুধগুলোর ব্যবহারবিধি কিংবা ধরন পরিবর্তন করতে হতে পারে।

চলুন, জেনে নিই কিছু রোগের ক্ষেত্রে যেভাবে রোজা রাখা যাবে:

শ্বাসকষ্ট : রোগ নিয়ন্ত্রণে থাকলে অ্যাজমা বা শ্বাসকষ্টের রোগীদের রোজা রাখতে কোনো বাধা নেই। রোজা রাখা অবস্থায় ইনহেলার নেওয়া যাবে কি না, এ ব্যাপারে সারা বিশ্বের ইসলামী চিন্তাবিদরা যে মতামত দিয়েছেন তাতে রোজা রাখা অবস্থায় ইনহেলার নিলে রোজার ক্ষতি হওয়ার কথা বলা হয়নি। এ ক্ষেত্রে মনে রাখা চাই, কেবল সঠিক নিয়মে ইনহেলার নিলেই রক্তে ওষুধ মিশতে পারে না বা নগণ্য পরিমাণ মেশার সম্ভাবনা থাকে। তবে সেহরি ও ইফতারের সময় ইনহেলার ব্যবহার করাটাই সবচেয়ে নিরাপদ।

উচ্চরক্তচাপ ও হৃদরোগ : যাদের উচ্চরক্তচাপ আছে তারা চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ বন্ধ বা নিজে কোনো সিদ্ধান্ত নেবেন না। মাঝেমধ্যে রক্তচাপ মেপে দেখুন। ওলট-পালট হলে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন। ডাইইউরেটিকস–জাতীয় ওষুধ যারা সেবন করেন, তাদের পানিশূন্যতা হতে পারে বেশি।

পেপটিক আলসার বা অ্যাসিডিটি : পেপটিক আলসারের রোগীদের প্রধান কাজ হলো নিয়মিত খাবার খাওয়া, ঘুমানো এবং ওষুধ গ্রহণ। রোজায় মানুষের জীবন একটা নিয়মে চলে আসে বিধায় এ সময় অ্যাসিডিটির সমস্যা অনেকাংশে কমে যায়। পাশাপাশি অবশ্যই ভাজাপোড়া জাতীয় খাবার পরিহার করতে হবে।

ডায়াবেটিস : যেসব ডায়াবেটিক রোগী বিশেষ খাবার এবং ব্যায়ামের মাধ্যমে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন তাদের জন্য রোজা রাখা খুব সহজ ও উপকারী। যারা মুখে ওষুধ গ্রহণের মাধ্যমে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখছেন তারাও চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী রোজা রাখতে পারবেন, তবে ব্যায়াম করার ব্যাপারে সতর্ক হতে হবে, যাতে ব্যায়ামের ধকল বেশি না হয়। আর ইনসুলিন গ্রহণকারী রোগীরা চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে রোজা রাখবেন। সেহরির সময় রুটি খাওয়া বেশ ভালো। কেননা তা দীর্ঘ সময় পেটে থাকায় রক্তের গ্লুকোজ হঠাৎ করে কমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে না। তবু রমজানে ডায়াবেটিস রোগীর রক্তে সুগারের মাত্রা হঠাৎ কমে গেলে বা হঠাৎ করে অজ্ঞান হয়ে পড়লে তাৎক্ষণিক এক গ্লাস শরবত পান করাতে হবে।

কিডনি : কিডনি রোগে রোজা রাখার ক্ষেত্রে বেশ কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। কিডনি ফেইলিউর রোগীদের সুনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন করতে হয়, নিয়মিত ওষুধ খেতে হয়, এমনকি পানি খাওয়ার ক্ষেত্রেও বিধিনিষেধ প্রয়োগ করা হয়। তাই রোজা রাখার ক্ষেত্রে তাদের বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়। এক বৈজ্ঞানিক সমীক্ষায় দেখা গেছে, অল্প থেকে মধ্যম মাত্রার কিডনি ফেইলিউর রোগীরা রোজা রাখলে কোনো ক্ষতি হয় না। সামান্য যা হয়, রোজার মাস শেষ হয়ে গেলে ১৫ দিনের মধ্যেই তা আগের মতো স্বাভাবিক হয়ে যায়। তবে যাদের কিডনি ফেইলিউরের মাত্রা একেবারে শেষ পর্যায়ে, তাদের পক্ষে রোজা রাখা সম্ভব নয়। তেমনি যারা ডায়ালাইসিসের রোগী অথবা ইতোমধ্যে কিডনি প্রতিস্থাপন করেছেন, ঘড়ির কাঁটা দেখে ওষুধ খেতে হয় বলে তাদের পক্ষেও রোজা রাখা প্রায় অসম্ভব। তবে শারীরিক অবস্থা যা-ই থাকুক না কেন, সর্বাবস্থায় আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে রোজা রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়াই শ্রেয়।